নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব বিগ্রেডিয়ার (অব:) সাখাওয়াত হোসেন মহোদয় দায়িত্ব্ব গ্রহণের পর প্রথম চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে আসেন ৬-৮ অক্টোবর। এই সফরে অনেক ব্যস্ততার মাঝেও বন্দর শ্রমিক-কর্মচারীদের সাথে ৫ মিনিট সময় দিলে আমরা কৃতার্থ হতাম। আমি একজন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি। দীর্ঘ ১৬ বছর কথা বলতে না পারার আক্ষেপ, আবেগ প্রকাশের জন্য খোলা চিঠির আশ্রয়ে। মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়, বাংলাদেশে স্বাধীনতা উত্তর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট, ৩০শে মে ১৯৮১ইং (শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান), ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থান, ১/১১ অভ্যুত্থান, সর্বশেষ ৫ই আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম, সকল অভ্যুত্থান ও গণ-আন্দোলনকে ছাপিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। হাজারো শহীদ ও পঙ্গত্ত্ব বরণ কারী বীরদের জাতি আজীবন শ্রদ্ধাভাবে স্মরণ করবে। ছাত্রদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রথম কারিগর বর্তমান সরকার। চট্টগ্রাম বন্দর আপনার অধীনত। অত্যান্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় সারা বাংলাদেশে সংস্কার শুরু হলেও চট্টগ্রাম বন্দর এখনও পরাধীন রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান অপসারিত হলেও আওয়ামী মদদ পুষ্ট, সাবেক মন্ত্রীর আর্শিবাদপুষ্ট, শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ জন হিসাবে পরিচিত সকলেই বহাল তবিয়তে স্ব-স্ব চেয়ারে প্রতিষ্ঠিত থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রিয় উপদেষ্টা মহোদয়, এদের “অপসারণ ও বদলী সময়ের দাবী। জানা যায় চট্টগ্রাম বন্দরের যাত্রা শুরু সপ্তদশ শতক থেকে। আরব, পর্তুগীজ, ব্রিটিশ বণিকরা ধারাবাহিক ভাবে এই বন্দর ব্যবহার করে আসছিলেন। চট্টগ্রাম বন্দরের আজকের এই উন্নয়ন ও অগ্রগতির পিছনে অবশ্যই বন্দরের কর্মকতা-কর্মচারীদের অবদান রয়েছে। পোর্ট ট্রাস্ট থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই উন্নয়নের গতিধারায় নতুন নতুন টার্মিনাল নির্মাণ, অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ সবই বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভব হয়েছে। রাষ্ট্রকে কখনও চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি, উপরোন্ত চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিবছর সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি টাকা অনুদান দেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে রাষ্ট্র চট্টগ্রাম বন্দর থেকে টাকা নিয়ে থাকেন। মহোদয়, চট্টগ্রাম বন্দরের মালামাল হ্যান্ডলিং বৃদ্ধির সাথে সাথে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু মহোদয় উদ্বেগের বিষয় হলো আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে অস্বাভাবিকভাবে ব্যয় বৃদ্ধি শুরু হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের গত ১৬ বছরের (২০০৯-২০২৪) বাজেটের সাথে এর আগের ১০ বছর (২০০৮-২০১৯) এর বাজেটের তুলনা করলে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তা ভয়ানক। এর মূল কারণ দুর্নীতি। পত্র পত্রিকা ও মিডিয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির যে খবর বেরিয়েছে তা ২০০৮-২০০৯ সালের পরবর্তী বাজেট পর্যালোচনা করলে ও বুঝা যায়। প্রিয় মহোদয়, দুর্নীতির কথা বলতে গেলে প্রথমেই অঙ্গুলী নির্দেশিত হয় প্রশাসনের দিকে। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রশাসন নৌ-বাহিনী ও নৌ-মন্ত্রনালয় দ্বারা পরিচালিত। চেয়ারম্যান সহ সকল নীতি নির্ধারনী বোর্ড সদস্য এর মধ্যে চেয়ারম্যান মহোদয় সহ ২জন বোর্ড সদস্য নৌ-বাহিনীর এবং অন্য দুইজন অতিরিক্ত সচিব। এছাড়া পরিচালক (প্রশাসক) মন্ত্রনালয় থেকে নিয়োগকৃত নীতি নির্ধারনীদের সকলেই স্বল্প সময়ের জন্য (২/৩ বছর) বন্দরে আসেন। এই নীতি নির্ধারনে বন্দর পরিবারের কেহ না থাকায়, তাহাদের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ আমাদের জানতে ইচ্ছা করে। নৌ-বাহিনীর এবং নৌ-মন্ত্রনালয় থেকে যে সকল কর্মকর্তাগণ চট্টগ্রাম বন্দরে আসেন তাদের আসার প্রক্রিয়াটি কি? এটা কি শাস্তিমূলক বদলী? চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট পদের জন্য অভিজ্ঞতার আলোকে বদলী? নাকি তদবীয় করে আসেন? তবে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নিয়োগকৃত অধিকাংশ কর্মকর্তাই যে দুর্নীতিগ্রস্থ ছিলেন তার আলোচনা সংবাদ মাধ্যম গুলোতে আছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য বা কোন বিভাগীয় প্রধান যাহারা যে প্রতিষ্ঠানের থেকেই এসেছেন সকলেই তাহাদের প্রাতিষ্ঠানিক পদে থেকে যে সকল সুযোগ-সুবিধা পেতেন তার চেয়ে অধিক সুযোগ সুবিধা চট্টগ্রাম বন্দরে পেয়ে থাকেন। তাই চট্টগ্রাম বন্দরে বদলী অনেকের জন্য লোভনীয় হতে পারে। “উক্ত বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। প্রিয় মহোদয়, দুর্নীতি মুক্ত, বৈষম্যহীন ও আন্তর্জাতিক মানে চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও উন্নত করতে হলে, দেশের ৯০ ভাগ আমদানী-রপ্তানী কাজে নিয়োজিত এবং সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এই প্রতিষ্ঠানে ভারসাম্যপূর্ণ একটি প্রশাসন প্রয়োজন। যে প্রশাসনে বন্দরে ২৫-৩০ বছর ধরে কর্মরত অভিজ্ঞ কর্মকর্তাগণ ও থাকবেন। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দর দিক হারা হবে না। আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রহ হবে না। বন্দরের শ্রমিক কর্মচারীরা অহেতুক হয়রানীর স্বীকার হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর মাফিয়াদের কড়াল থাবা থেকে রক্ষা পাবে।মহোদয়, চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা ও শ্রমিক কর্মচারীদের অধিকার এর কথা বলেই শেষ করব। চট্টগ্রাম বন্দরের অর্গানোগ্রামে লোকবল বৃদ্ধি ও শূন্য পদে লোক নিয়োগ । চট্টগ্রাম বন্দর এর জন্য আন্তর্জাতিক মানের স্বতন্ত্র পে-স্কেল চালু করা। (১৯৭১ সালের পূর্বে করাচি পোর্ট ও পো ট্রাষ্ট-এ আন্তজার্তিক মানের পে-স্কেল ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী মুজিব সরকার তা কেড়ে নেন। অথচ বিএস শিপিং বাংলাদেশ বিমান অদ্যবধি আন্তজার্তিক মানে বেতন পাচ্ছেন) ৩। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ১০% লভ্যাংশ চালু। (যা সমভাবে বণ্টিত হবে) “আমাদের টাকায় নির্মিত টার্মিনাল, আমাদের টাকায় ক্রয়কৃত যন্ত্রপাতি, ব্যক্তি মালিকানায় হাতান্তর বন্ধ করাচ্মহামান্য নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার নিকট বিনীত আরজী রইলো। মুহাম্মদ ইয়াছিন সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম বন্দর ইসলামী শ্রমিক সংঘ।